ইতিহাসে চমৎকার এবং আশ্চর্য হওয়ার মত তো অনেক ঘটনাই রয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঘটনা রয়েছে যা দৈবীয়, অর্থাৎ যেগুলোর রেফারেন্স আমরা বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থতেও পেয়ে থাকি। যার ব্যাখ্যা করা কখনই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে কিছু সাম্প্রতিক আশ্চর্যমণ্ডিত ঘটনা রয়েছে যাকে বলা হয় প্রকৃতির চমৎকার; আর এসব ঘটনা আমদের কে অনেকটা ভাবিয়ে তোলে।
মাইক দ্যা হেডলেস চিকেন
কোন প্রাকৃতিক রহস্যময় স্থান বা ব্যাক্তিত্ত নিয়ে নয়। এই লেখায় আপনাদের জানাব একটি মাথাবিহীন মুরগির ব্যাপারে, হ্যা আপনি ঠিকই পড়লেন মাথাবিহীন মুরগি। ব্যাপারটা অবাক এবং পাশাপাশি দারুন রকমের আশ্চর্য হওয়ার মত।
গল্পটি একটি সাধারন মুরগিকে নিয়ে। তবে সেই মুরগির সাথে ঘটে যায় এমন একটি ঘটনা যা বর্তমান পৃথিবীতে এখনও একটি আশ্চর্যমন্ডিত চমৎকার হিসেবে উল্লেখ্য হয়ে আছে।
ঘটনাটি ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ এর। আমেরিকার কলোরাডো এর একজন কৃষক লর্ড অলসেন তার খামার থেকে একটি মুরগি নেন নৈশভোজে খাবেন বলে। তিনি তার কুড়াল দিয়ে মুরগির মুরগীটির গলায় আঘাত করেন। এতে করে দেখায় যায় মুরগীর মাথা তার কাছে থাকলেও, মুরগীটির দেহ ছিটকে পরে একটু দূরে।
তো স্বাভাবিক ভাবেই অলসেন ভাবেন মুরগীটি মরে যাবে হয়ত একটু পরেই। তবে সেই মুরগি মরে না। একটু পরে তিনি আবিস্কার করেন সেই মুরগীর গলা থেকে কেমন একটা শব্দ বের হচ্ছে। এতে করে তিনি অবাক হন এবং মুরগীটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কাছে গেলেই মুরগীটি চলা এবং দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।
মুরগীটি কিচ্ছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করার পর শান্ত হয়ে হাঁটতে থাকলে, তিনি অনেকটা অবাক হন। আর মুরগীটি আদৌ কখন মরবে দেখার জন্য তিনি সেই মুরগীটিকে রাতে একটি বাক্সের ভেতর রেখে দেন। সকালে উঠে তিনি যা দেখেন টা রীতিমত পিলে চমকে যাওয়ার মত । মাথা ছাড়াই মুরগীটি বেচে রয়েছে আর একটি স্বাভাবিক মুরগীর মতই নড়াচড়া করছে।
অতঃপর লর্ড অলসেন সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এই মুরগীটিকে পালবেন। তিনি মুরগীটির নাম দেন মাইক। আর এর মধ্যে এই মুরগি নিয়ে আসেপাশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেই সময় এই নিয়ে আমেরিকায় বেশ পত্রপত্রিকায় দারুন লেখালেখি হয়।


দারুন ব্যাপার যে, মাথা কাটা মুরগীর গলার কাটা অংশে খাদ্যনালীর একটি অংশ বের হয়ে ছিল। আর অলসেন এই নালি দিয়ে ড্রপার এর মাধ্যমে সেই মুরগীটিকে তরল জাতীয় খাদ্য খাওয়াচ্ছিলেন। আর এই নিয়ে দারুন বেচে ছিলো মুরগীটি। আর মুরগীটি সেই নালি দিয়েই শ্বাসপ্রশ্বাস এর কাজ সারত।
এর মধ্যে তার মুরগির অলসেন এর নামডাক খুব ভালোভাবেই ছড়িয়ে পরছিল চারিদিকে। আর তিনি তার এই মাথাছাড়া মুরগীটিকে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে বিশ্ব ভ্রমনেও বেড়িয়েছিলেন।


তবে কিছুদিন পর ১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ ঘটে গেলো এক বিপত্তি। অলসেন মাইককে হোটেল রুমে ড্রপার দিয়ে খাওয়ানোর সময় খাবারের একটি ছোটো টুকরা মাইকের (মুরগীর নাম মাইক) গলায় আটকে যায়। আর এতে করেই মারা যায় আশ্চর্যময় চমৎকার এই মুরগীটি।


আর এই মৃত্যুর আগে মাইক ১৮ মাস তার মাথা ছাড়াই অন্য স্বাভাবিক মুরগীর মতই বেচে ছিল। আর যা ছিল বর্তমান পৃথিবীর ইতিহাসে এক অন্যতম চমৎকার।
বিজ্ঞানিরা সে সময় এই মুরগীর বেঁচে থাকার রহস্য উতঘাটন করতে পারেনি। আর পরবর্তীতে আরও অনেক মুরগীর অপর পরীক্ষা চালালেও বিজ্ঞানিরা সফল হয়নি। এটা এখনও বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অন্যতম রহস্য।